।।একজন স্বপ্নদ্রষ্টার উত্থান।।
By Islam Sifat January 13, 2021
২০০২ পরবর্তী সময়টা তখন তেমন একটা ভালো যাচ্ছিলো না। দেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সর্বোপরি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তখন চরমভাবে মুখ থুঁবড়ে পরেছিলো। অভিভাবকরা শিক্ষা বলতে তখন তাত্ত্বিক শিক্ষাকে বুঝতো। দেশের হতাশ যুবসমাজ বেকারত্বের প্রবল চাপে ছিলো দিশেহারা। এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালে সদ্য কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে আসা একজন যুবক বিভিন্ন জায়গাতে কাজ করতে গিয়ে দেশের একটি বৃহত্তম যুবসমাজকে শুধুমাত্র কারিগরি দক্ষতার অভাবে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরেও বেকার অবস্থায় দেখতে পান। এই চিত্র পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে সামনে রেখে সমমনা কিছু উদ্দোক্ত্যা কে নিয়ে নিজের সবটুকু সম্বল নিয়ে ঝাপিয়ে পরেছিলেন বরিশালের সর্ব প্রথম বেসরকারি পলিটেকনিক ইনফ্রা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। জ্বি বলছিলাম ড. ইমরান চৌধুরীর কথা। বিভিন্ন মহলের বাঁধা-বিপত্তির পরেও তিনি সফল ছিলেন। মাঝখানে শুরুর দিকের কারিগরদের অনেকে চলে গেলেও তিনি ছিলেন অবিচল। তার দৃঢ় মনোভাবের কারনে আজ এই ২০২১ সালে এসে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি পলিটেকনিক হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইনফ্রা।
এই চলার পথে অনেক বাঁধা ছিলো। সবকিছুকে পাশে ঠেলে শুধুমাত্র বরিশাল নয়, সারা দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তিঁল তিঁল করে আজ মহীরুহতে পরিনত হয়েছে ইনফ্রা। এই প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সফলতার সাথে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত আছে। ইনফ্রাতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। সেমিষ্টার ফি মওকুফ, ফ্রি তে বই প্রদান হচ্ছে সেমিষ্টার শুরু ও শেষের নিয়মিত ঘটনা। নানাবিধ শিক্ষার্থী বান্ধব কার্যক্রমের কারনে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত করেছে ইনফ্রাকে। এসময়ে তিনি "বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা-২০৫০" নিয়ে গবেষনা করেন ও সফলভাবে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এটি নিয়ে তিনি একটি বিশদ বইও লিখেছেন। বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কতৃক প্রশংসিত হয়।
পলিটেকনিক নিয়ে কাজ করার সময়েই তিনি লক্ষ্য করেছিলেন দক্ষিনবঙ্গে তথা বরিশালে একটিমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যা শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রাজধানী গমন। অনেকক্ষেত্রে দূরত্ব ও কিছুটা অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সময়-সুযোগ ও অর্থের অভাবে নিতে পারছিলেন না উচ্চশিক্ষা। এই ভাবনা থেকেই তিনি শুরু করেন " University Of Global Village (UGV)" প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম।
তার সাথে যোগদান করেন দেশের প্রথিতযশা কিছু সমমনা ব্যক্তিগন। এখানে এসেও স্থানীয় ও বাইরের কিছু মুনাফালোভীদের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। তারপরেও ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টিবোর্ডের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, সবার সম্মতিক্রমে নির্বাচিত ট্রাষ্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. ইমরান চৌধুরী সবাইকে সাথে নিয়ে ২০১৬ সালে Private University Act এর আওতায় অনুমোদন লাভ করেন দক্ষিনবঙ্গের প্রথম হাইটেক বেসরকারি ইউনিভার্সিটি UGV এর। এখানে সল্প খরচে সর্বোচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করা হয়। যেটি UGV এর ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে দেখলে , ফ্যাকাল্টিদের তালিকা ও শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন দেখলেই বোঝা যায়। খুব অল্পসময়েই বরিশালের বাইরে তথা সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে UGV। আছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। UGV এর আছে সুগঠিত ল্যাব। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা।
রয়েছে সল্পমূল্যে ডরমেটরি। ওদিকে অচিরেই শুরু হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ। এই সবকিছুর পিছনে পর্দার আড়ালে থেকে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে দিন-রাত কাজ করে গিয়েছেন ড. ইমরান চৌধুরী। UGV ও INFRA এর সকল শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে প্রবল জনপ্রিয় ড. ইমরান চৌধুরী যেটি তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। তিনি এরই মাঝে লাভ করেছেন অনেক সম্মাননা। সম্মাননা লাভ করেছেন সরকার কতৃক। লাভ করেছেন বরিশালের সর্বোচ্চ করদাতার খেতাব। এতো এতো সম্মাননা ও অর্জনের মাঝেও নিজের মূল লক্ষ্য তথা দক্ষ্য জনগোষ্ঠী গঠনের কাজে আছেন অবিচল। দেশের মানুষের সেবায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন " Amar Bangladesh Foundation"। ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা এই শীতে সারা বাংলাদেশে শীতবস্ত্র বিতরন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে তেঁইশটিরও অধিক আইটি ও ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স অনলাইনে সম্পূর্ন বিনামূল্যে।
শিক্ষা হোক সহজলভ্য, শিক্ষা হোক অপরিহার্য এই স্লোগানকে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন ড. ইমরান চৌধুরী। শুভ হোক তার পথচলা।
Leave a comment